সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে (সাবেক অ্যাপোলো) তিনি সোমবার বিকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।তার মৃত্যুতে দেশের শিল্প খাতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এর বাইরে চীনের ৪ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়েছেন।ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় অসময় চলে গেলেন তিনি। করোনার সংকট কাটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার মতো উদ্যোক্তার খুবই দরকার ছিল। এ সময় তার চলে যাওয়া দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।গত ১৪ জুন নুরুল ইসলামকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বিশিষ্ট এই শিল্পোদ্যোক্তার চিকিৎসায় এভার কেয়ারের ডা. ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহবুদের নেতৃত্ব ১০ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।তার স্ত্রী সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বর্তমান জাতীয় সংসদের এমপি সালমা ইসলাম। ছেলে শামীম ইসলাম যমুনা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তার তিন মেয়ে- রোজালিন ইসলাম, মনিকা ইসলাম এবং সোনিয়া ইসলাম যমুনা গ্রুপের পরিচালক।যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। ১৯৭৪ সালে নুরুল ইসলাম যমুনা গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। মেধা, দক্ষতা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার মাধ্যমে একে একে শিল্প এবং সেবা খাতে গড়ে তোলেন ৩৮টি প্রতিষ্ঠান।দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। বর্তমানে লক্ষাধিক মানুষ কাজ করছেন যমুনা গ্রুপে।দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে নুরুল ইসলাম একজন আধুনিক চিন্তার সাহসী উদ্যোক্তা। বর্তমানে লক্ষাধিক মানুষ কাজ করছেন যমুনা গ্রুপে।এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক, নির্মাণাধীন মেরিয়টস হোটেলসহ শিল্প ও সেবা খাতে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে গ্রুপটি।ইলেকট্রনিকস, বস্ত্র, ওভেন গার্মেন্টস, রাসায়নিক, চামড়া, মোটরসাইকেল, বেভারেজ টয়লেট্রিজ, নির্মাণ এবং আবাসন খাতে ব্যবসায় শীর্ষস্থানে রয়েছে এই গ্রুপ।এ ছাড়া দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।সর্বশেষ করোনার চিকিৎসায় কুড়িলে ৩০০ ফিটের কাছে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। ইতিমধ্যে এর প্রাথমিক আলোচনাও শেষ করেছিলেন তিনি।করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া করোনা মোকাবেলায় সহজ ও সুলভমূল্যে যমুনা গ্রুপ তৈরি করছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। গুণগত মানের দিক থেকে যমুনা গ্রুপ স্বাস্থ্যসম্মত পিপিই তৈরি করছে।এই সফল শিল্প উদ্যোক্তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ শিল্প খাতে।
মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ নুর-ই আলম চৌধুরী লিটন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের এমপি, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মুজিবুল হক চুন্নু, মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ পার্টির নেতাকর্মীরা। তারা মরহুমের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমীর হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, মৎস ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যহ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম শোক প্রকাশ করেছেন।
নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি ও সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার এমপি, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, জেএসডির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বীর প্রতীক, বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
রিয়েল অ্যাস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন।
নুরুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে যমুনা গ্রুপ, দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন পরিবারে। এই কঠিন সময়ে অভিভাবকের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা।
মঙ্গলবার বাদ জোহর যমুনা ফিউচার পার্ক মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :